“Higher Studies in Taiwan-1”


 বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন আমরা অনেকেই দেখি কিন্তু দুঃখের বিষয়, সবাই সেই লক্ষে পৌছাতে পারিনা, সেটার হয়ত ব্যক্তি বা পরিস্থিতি বিশেষে অনেক কারন থাকতে পারে। কিন্তু আমার কাছে মনেহয় অনেকের ক্ষেত্রে কিছু কমন কারন থাকে। নোট টা লেখার পিছনে সেরকম দুইটা কারন আছে, প্রথমত, আমাদের দেশে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, “উচ্চশিক্ষার জায়গা মানেই আমেরিকা, ক্যানাডা, ইউকে, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া” এর বাইরে আমরা ভাবতেই পারিনা বা চাইনা।

দ্বিতীয়ত, “আমি তো পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে পড়িনি, আর পড়লেও আমি তো ক্লাসের টপ ৫ জন  স্টুডেন্টের মধ্যে ছিলাম না, সুতরং আমার দারা হবে না বা আমি স্কলারশিপ পাবো না”।

 

এই ধারণা গুলো আমাদের অনেক স্বপ্নকেই সত্যি হতে দেয় না। আমারও একসময় ঐরকম ভয় কাজ করত। কিন্তু মনের মধ্যে উচ্চশিক্ষার একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল বরাবর। আর সেখান থেকেই খুজতে থাকলাম কোথায় আমি যেতে পারি, সিন্ধান্ত নিলাম তাইওানে অ্যাপ্লাই করার, অনেক চেষ্টার পর স্কলারশিপটা পেলাম এবং চলে আসলাম তাইওয়ান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যখন হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী স্কলারশিপ নিয়ে এখানে পড়াশোনা করছে, সেখানে আমরা পুরা তাইওয়ানে 8 থেকে ১0 জন বাংলাদেশী স্টুডেন্ট আছি। এখানে আসার পর মনেহল আমাদের দেশের স্টুডেন্ট দের জন্য তাইওয়ান হতে পারে উচ্চশিক্ষার জন্য সব দিক থেকেই অনেক ভালো একটা জায়গা। সেটার অনেক অনেক কারন দেখানো যাবে, আমি এখানে আমার পছন্দের ১০ টা কারন সবার সাথে শেয়ার করলাম।

 

  1. World University Ranking:

তাইওয়ানে মোট ১১১ টা ইউনিভার্সিটি আছে সরকারী/ বেসরকারি মিলে। পৃথিবীর সেরা ১০০০ ইউনিভার্সিটির মধ্যে ২৫ টা ইউনিভার্সিটিই তাইওয়ানএর, তার মধ্যে আবার National Taiwan University হল ৬৫তম স্থানে। ইউনিভার্সিটি এর সংখ্যার দিক থেকে তাইওয়ান আছে ১২তম স্থানে। আর শিক্ষা ব্যাবস্থা এবং মান কেমন তা এই পরিসংখান থেকে সহজেই বোঝা যায়।  

 

Reference: http://cwur.org/2014/

 

  1. Research Activity:

এখানের প্রত্যেকটা ইউনিভার্সিটির শিক্ষা পদ্ধতিই গবেষণা মূলক, বিখ্যাত জার্নাল নেচার এ প্রকাশিত একটা আর্টিকেলে দেখায় ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত বিশ্বের ৩০ টি দেশের প্রায় ৫০ লাখ গবেষণা আর্টিকেলের পরিসংখ্যান। এখানেও অন্যান্য দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে রিসার্চ আর্টিকেল প্রকাশের তালিকাতেও  ১২ তম স্থানে আছে তাইওয়ান। সুতরং বোঝাই যাচ্ছে রিসার্চ এর দিক থেকে তাইওয়ান অনেক অনেক এগিয়ে।

 

 

  1. Scholarship:

কোথায় জানি পড়েছিলাম, অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী অমর্ত্য সেন একবার জাপান ভ্রমনে গেলে, জাপানিজরা ওনার কাছে প্রশ্ন করেছিল কিভাবে জাপানের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ করতে পারবে। ওনার উত্তর ছিল শিক্ষা খাতে ব্যয় দ্বিগুণ করে দেন, প্রবৃদ্ধি দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তাইওয়ান ঠিক সেটাই অনুসরন করে।  বাংলাদেশের ৩ ভাগের ১ ভাগ সমান ছোট একটা দ্বিপ তাইওয়ান, কিন্তু এরা এত সুন্দর করে গুছিয়ে নিয়েছে সবকিছু দেখলে অবাক লাগে। আমার মনেহয় তাইওয়ান সরকার সবথেকে বেশি ব্যয় করে শিক্ষা খাতে। তাইওানে অনেক ধরনের স্কলারশিপ এর সুযোগ আছে, তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য, তাইওয়ান এডুকেশন অফ মিনিসট্রি থেকে ‘Taiwan scholarship” দেয়া হয়। তাছাড়া সবগুলো ইউনিভার্সিটিই ইন্টারন্যাশনাল গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এছাড়াও অনেক অনেক সাপোর্টিভ স্কলারশিপও আছে।

 

  1. Campus Activity:

আমি অন্য দেশেরটা জানি না, তবে তাইওানের প্রত্যেকটা ইউনিভার্সিটিই এত সুন্দর ভাবে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট দের টেক কেয়ার করে বলার না, যেমন তাইওানের প্রত্যেকটা সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যগত সব প্রোগ্রামেই বাইরের স্টুডেন্টদের অংশগ্রহনের আলাদা সুযোগ করেদেয়। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রকম প্রোগ্রাম আয়োজন করে যাতে তাইওান সম্পর্কে এবং তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারি আমরা। প্রায় প্রতি সেমিস্টারেই কথাও না কথাও ট্যুর এর ব্যাবস্থা করে।

 

 

  1. Host Family:  

আমার সবথেকে ভালো লাগে “তাইওয়ান হোষ্ট ফ্যামিলি” নামের এই প্রোগ্রামটা, যেটা তাইওয়ান মিনিস্ট্রি অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে পরিচালিত হয়। তাইওানে যারা তাদের দেশ ছেড়ে অনেক দিনের জন্য পড়াশুনা করতে আসে, তারা অবশ্যই তাদের ফ্যামিলিকে মিস করে। আর তাদেরকে সামান্য হলেও সাপোর্ট দেয়ার জন্য এই প্রোগ্রাম। এখানে অনেক তাইওানিজ ফ্যামিলি আছে যারা ১ থেকে ৩ জন ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টকে তাদের ফ্যামিলি মেম্বার করে নেয়, যতদিন তারা তাইওানে আছে। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে ওইসব ফ্যামিলি, স্টুডেন্টদেরকে আমন্ত্রন করে যাতে তারা একাকীত্ব না বোধ করে সেই সাথে আবার তাইওানের সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যাপারগুলো খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারে এটাই উদ্দেশ্য।

 

  1. 2nd Safest Country:

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল বিষয়ক ওয়েবসাইট,“লাইফস্টাইল9”, এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বসবাসের জন্য নিরাপদ টপ ১০ দেশের দুই নম্বর স্থানে আছে তাইওয়ান। কোন জরিপ অনুসরন না করেই আমি বলতে পারি তাইওয়ান থাকার জন্য অনেক অনেক সুন্দর একটা জায়গা, এটা আমার নিজের উপলব্ধি। এরা বিশেষ করে উল্লেখ করে যে, “এখানে মহিলারা সম্পূর্ণ নিরাপদ, এমনকি মাঝ রাতে একলা চলাফেরতেও”। এখানকার প্রশাসন নিরাপত্তার দিক দিয়ে অনেক কড়া।

http://www.taiwantoday.tw/ct.asp?xItem=219538&ctNode=413

 

  1. Job Opportunity:

তাইওয়ানকে বলাহয় এশিয়ার ৪ টাইগার এর একটা, তাইওয়ানের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির কারনে বলাহয়, “Taiwan Miracle”।  এশিয়ার টপ কোম্পানির মধ্যে প্রায় অনেকগুলোই তাইওয়ান এর। htc, Asus, Acer সহ অনেক বড় বড় কোম্পানিই এখানে গড়ে উঠেছে। শুধু ইলেকট্রনিক্স কোম্পানিই না, সব ধরনের কোম্পানিই এখানে আছে বড় পরিসরে। যথাযত যোগ্যতার থাকলে জব অপরচুনিটিও থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে চাইনিজ ভাষা জানাটা জরুরী জব পাওয়ার ক্ষেত্রে।

 

  1. Friendly Environment:

তাইওানিজরা এত পর উপকারী এদের সাথে না মিশলে বোঝা যাবে না। আবার এখানের আবহাওয়াও বাংলাদেশের থেকে খুব বেশি তফাৎ না। সেই সাথে কেনা কাটা থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া সব জিনিসের  মূল্য আহামরি বেশি না।

 

  1. Learning Chines:

অনেকের বিভিন্ন ভাষা শেখার ইচ্ছা থাকে, সেই ইচ্ছা থেকেই চাইনিজ ভাষা শিখতে চাইলে তাইওয়ান হল সবথেকে ভালো স্থান।  আর ইচ্ছা থাক বা না থাক, চাইনিজরা যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাতে চাইনিজ শিখলে সেটা বিফলে যাবে না,  কোন না কোন এক সময় তা কাজে দিতেও পারে। আর মজার ব্যাপার হল এখানে প্রায় প্রত্যেকটা ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের চাইনিজ কোর্স করতে হয়, কারন এটা স্কলারশিপ এর একটা শর্ত।

 

 

  1. Amazing experience:

তাইওয়ানে আছে ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত “The world’s tallest building: Taipei 101”, যেটা এখনো তৃতীয় স্থানে আছে। তাইওয়ানের আছে “Taiwan high speed rail” যার গতি ৩০০ কিঃমিঃ/ ঘণ্টা।  আমার কাছে মহেনয় পৃথিবীর সুন্দরতম দেশগুলোর একটা তাইওয়ান। যেখানে যেটা থাকার দরকার ঠিক সেখানেই সেটা আছে এখানে। তাইওানিজরা সুন্দর জিনিসটার একটা অন্য মাত্রায় উপস্থাপন করে, সেটা কোন স্থাপনা হোক বা ট্রেন ষ্টেশন এর রেস্ট রুম। কোন কোন রেস্ট রুমে গেলে মনেহয় কোন পেইন্টিং এক্সিবিশানে আসলাম নাকি। তাইওয়ানের প্রায় সব বড় ট্রেন স্টেশন, বাস স্টেশন, পর্যটক এলাকা, ইম্পরট্যান্ট পার্ক সহ প্রায় সাড়ে চার হাজার ওয়াই-ফাই হট স্পট আছে, iTaiwan নামে ফ্রী ইন্টারনেট সার্ভিস। আর তাইওয়ানের “Night market” এর কথা না বললেই নয়। আর সাথে আছে তাইওানিজ খাবার, আমি তাইওয়ান না আসলে জানতামই না যে দুনিয়ায় এত রকম খাবার আছে।

 

 

Mezbahul Haque

Graduate Student

Cellular & Molecular Pharmacology Lab.

Dept. of Microbiology, Immunology & Biopharmaceuticals

National Chiayi Uniersity

Taiwan.

www.mezba.info

 

 

Have any Question or Comment?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *