এশিয়ার প্রথম উন্নত দেশ হচ্ছে জাপান. জাপানে অনেকেই পড়াশোনার জন্য আসতে চান. তবে সবারই একটা অভিপ্রায় থাকে বৃত্তি নিয়ে জাপানে পড়াশোনা করার কারণ জাপানের জীবনযাত্রা মোটামুটি অনেকটাই ব্যয়বহুল.
আমাদের দেশ থেকে জাপানে পড়াশোনা করতে আসতে চাইলে মূলত দুই ধরণের বৃত্তি রয়েছে – সরকারি বৃত্তি এবং বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বৃত্তি.
আর সরকারি বৃত্তিটি মূলত মেক্সট নাম পরিচিত. আবার এই মেক্সট বৃত্তির জন্য দুইভাবে আবেদন করা যায় – সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে/এম্বেসীর মাধ্যমে (through embassy/ministry) এবং সরাসরি ভার্সিটির মাধ্যমে (through university).
তবে এই দুই পদ্ধতির আবেদনের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে যেমন –
১. এম্বেসী কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মূলত চারটি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করা যায় –
<> Research Student (মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি)
<> Undergraduate Student
<> Specialized training school student
<> College of technology student
২. আবার সরাসরি ভার্সিটির মাধ্যমে করলে কেবল মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করা যায়.
৩. সাধারণত ভার্সিটির মাধ্যমে আবেদনের প্রক্রিয়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদনের প্রক্রিয়ার অনেক আগেই শেষ হয়. কিন্তু আপনি যেই ভাবেই আবেদন করেন প্রোগ্রাম কিন্তু একই সময়ে শুরু হয়.
৪. মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করলে এম্বেসীতে একটি লিখিত পরীক্ষা দেয়া লাগে যাতে মূলত ইংলিশ, জাপানিজ এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিষয়ভিত্তিক জিনিসগুলো থাকে. এই পরীক্ষার সম্পর্কে সাধারণত এম্বেসীই জানিয়ে দেয়.
ভার্সিটির মাধ্যমে আবেদন করলে সাধারণত লিখিত পরীক্ষার দরকার নেই কিন্তু ভার্সিটিতে আগে আপনাকে একজন সুপারভাইজার ঠিক করতে হবে.
অনেক সময় সুপারভাইজার স্কাইপে ছোট খাটো একটি ইন্টারভিউ নিতে পারেন. আবার উনি হয়তো আপনার গবেষণার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইতে পারেন.
বর্তমানে আমাদের দেশে মেক্সট এর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে.
জাপান এম্বেসী বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে প্রত্যেক প্রোগ্রামের জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগবে এবং কি করে আবেদন করতে হবে তার পূর্ণ বিবরণ দেয়া আছে. এই লিংকটিতে ক্লিক করলে জানতে পারবেন –
জাপানে মূলত প্রায় সব মাস্টার্স প্রোগ্রামই রিসার্চ মাস্টার. আর পিএইচডি তো এমনিতেই ফুল রিসার্চ মোড প্রোগ্রাম.
মেক্সট এর মাধ্যমে মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি এর জন্য আবেদন করতে হলে মূলত ইংলিশ এবং জাপানিজ এর উপর পরীক্ষা দিতে হবে. তবে খুশির কথা হলো আপনি চাইলে ইংলিশ ভার্শনে পড়তে পারবেন. মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি তে জাপানি ভার্শনে পড়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই.
মূলত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করার পর আবেদনগুলোকে শর্টলিস্ট করে এম্বেসীতে পাঠানো হয়. তারপর এম্বেসী লিখিত একটি পরীক্ষা নিয়ে থাকে.
লিখিত পরীক্ষার যারা পাস করে তাদেরকে এম্বেসী থেকে জানানো হয় তাদের পছন্দের ভার্সিটিগুলোর থেকে একটি প্রভিশনাল এডমিশন লেটার নিতে. এই প্রভিশনাল এডমিশন লেটার আরো কিছু ডকুমেন্টসহ এম্বেসীতে জমা দিতে হয়.
জমা দেয়ার পর মেক্সট একটি ফাইনাল স্ক্রীনিং করে এবং পরে আপনাকে ফলাফল জানিয়ে দিবে. মোটামুটি সবমিলে জাপানে আপনি এপ্রিল ২০২০ কিংবা অক্টোবর ২০২০ এর মধ্যে আসার কথা মাথায় রাখতে পারেন.
এবার আসি যারা যারা ব্যাচেলর পর্যায়ে আবেদন করবেন তাদের কথায়. তাদের পরীক্ষা হবে মূলত ইংলিশ এবং জাপানিজ এর উপর. তবে যারা বিজ্ঞানের তাদের জন্য গণিতের এবং বিজ্ঞানের উপরও পরীক্ষা হবে এই দুইটি বিষয় ছাড়া.
ব্যাচেলর পর্যায়ের ক্ষেত্রে সাধারণত জাপানিজ ভার্শনে পড়ানো হয়. তাই এই বৃত্তি পেয়ে জাপানে আসার পর প্রথম ১ বছর ভাষা শিখে তারপর ব্যাচেলর ডিগ্রী করতে হয়.
মেক্সট এ আবেদনের যে ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করে তা হচ্ছে ভার্সিটি নির্বাচনের উপর.
জাপানে প্রায় ৭০০ এর মতো ভার্সিটি রয়েছে. আবার এই খানের ভার্সিটিগুলো ৩ ধরণের – National University, Prefectural University
এবং Private University.
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিগুলো (national university) হচ্ছে সাধারণত অনেক বড় এবং এগুলোতে গবেষণাও হয় অনেক বেশি. জাপানে প্রায় ৮৬টি ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি রয়েছে উইকিপিডিয়ার দেয়া তথ্য অনুযায়ী.
তাই আমি বলবো যদি জাপানে আসতেই চান তাহলে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিগুলোতে আসাই ভালো.
কিন্তু তার মানে এই না যে বাকি ইউনিভার্সিটিগুলোর মান খারাপ. জাপানে কিন্তু প্রতিটা ভার্সিটিই একটি মান বজায় রাখে যা আমাদের দেশের ভার্সিটিগুলোর থেকে অনেক বেশি.
আর একটি জিনিস হচ্ছে জাপানে সাধারণত এমবিএ কিংবা ব্যবসায় সংক্রান্ত ডিগ্রীগুলো খুব কমই কারণ জাপানে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে প্রচুর গবেষণা হয়. তবে ব্যবসায় নিয়ে যারা পড়তে চান তাদের জন্য পরামর্শ হলো অর্থনীতি নিয়ে পড়া.
জাপান কিন্তু মিক্সিং এর জন্য অনেক বিখ্যাত. তাই এই খানে ব্যবসায়ের অনেক বিষয়গুলো অর্থনীতি স্কুল এর অধীনে পড়ানো হয়ে থাকে.
তাহলে আর দেরি না করে মেক্সট বৃত্তির জন্য আবেদন করে দিন সবাই.
সবার সাফল্য কামনা করছি.
ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন.
আর অন্যায়কে সর্বদা না বলুন. একে অন্যের সাহায্য করুন.
লিখেছেন-
নূর-আল-আহাদ
বিবিএ (ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা) ১৪ তম ব্যাচ
এমবিএ (ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া)
ফিনান্সিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষক (জাপান)